সুদীপ্ত বিশ্বাস
আমার পাষাণ বুকে
হে বন্ধু, হে প্রিয়
হলেও কিছুটা কষ্ট
নামখানি তুমি লিখে দিও।
যে দাগ সহজে আঁকা
সহজেই মুছে যায় সেটি
পাথর আগলে রাখে
আজীবন বুকের রেখাটি।
বিরহ
সেটা স্পষ্ট ভাবে খোদাই হয়ে আছে
সেটা মরতে গিয়ে আবার বেঁচে ওঠে
তাকে মারব বলে মিথ্যে ছোটাছুটি
সেটা রোজ সকালে পদ্ম হয়ে ফোটে ।
সেটা হারিয়ে গেলে দারুণ ভাল হত
সেটা অনেক বেশি কষ্ট বয়ে আনে
সেটা দিনের শেষে নিদ্রা কেড়ে নেয়
সেটা কাঁটার মত বিঁধেই থাকে প্রাণে ।
তাকে এড়িয়ে যেতে দুহাতে চোখ ঢাকি
তাকে ভুলব বলে মিথ্যে ছুটে মরি
তার মায়ার জালে বদ্ধ আমি আজও
তার গভীর জলে ডোবে আমার তরি ।
তার শীতল বিষে জ্বলছে গোটা দেহ
তাকে ভুলব বলে তিলক মাটি আঁকি
তার আবছা মুখে কাপড় ঢেকে দিলে
তার স্মৃতির কথা বলে ভোরের পাখি।
জীবন মানে
জীবন মানে দখিন হাওয়া অল্প
কিছু পাওয়া
জীবন মানে হিমেল বাতাস অনেক
হারিয়ে যাওয়া।
জীবন মানে তরাই-ডুয়ার্স, ভাটিয়ালির গান
জীবন মানে কান্না-হাসি, অল্প অভিমান।
জীবন মানে দূর পাহাড়ের মাঝ
রাতের আলো
জীবন মানে কালো মেঘে
বিদ্যুৎ চমকাল।
জীবন মানে প্রজাপতি লাল
ফুলটার পাশে
জীবন মানে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি
নেমে আসে।
জীবন মানে এই ফুল তুই কার
খুশিতে ফুটিস ?
থ্রিজির যুগে জীবন মানে
ইঁদুর দৌড়ে ছুটিস...
জীবন মানে একটু আলো একটু
বেঁচে থাকা
জীবন মানে আকাশ জুড়ে
রামধনুটা আঁকা
জীবন মানে পাগল বাউল যায় না
তাকে বোঝা
জীবন মানে ভালবাসা, মিথ্যে মানে খোঁজা …
বাঁচা
সকাল বিকাল ব্যস্ত হয়ে
ঘুরছি যে ভাই খোশ মেজাজে
তোমরা যারা হিসেব কষ নোংরা
তারা ভীষণ বাজে।
আমি তো বেশ পাহাড় চড়ি,
ঝর্ণা দেখি প্রতিদিনই
তোমরা শুধু ভ্যানতারা গাও-
‘রক্তে চিনি, রক্তে চিনি।’
আমি তো রোজ মেঘের পাশে চাঁদ
খুলে দিই রাত দুপুরে
আকাশ তখন নাচতে থাকে তারার
আলোয় আদিম সুরে।
আবার যখন ভর দুপুরে ঝাপুর-ঝুপুর
বৃষ্টি নামে
তোমরা তবু হিসেব কষ, শেয়ার
কেন অল্প দামে।
আমি তখন ছাদের পাশে লুকিয়ে
দেখি গোলাপ কুঁড়ি
কিংবা হঠাৎ লাটাই নিয়ে মনের
সুখে উড়াই ঘুড়ি।
বনের পাশে ঘরটি আমার ঘর
মানে তো খেলনাবাটি
আসল কথা গুরুই জানে- ‘মাটি
টাকা, টাকা মাটি।’
বেঁচে আছি মনের সুখে বাঁচতে
আমার ইচ্ছে আরও
তোমরাও ভাই ইচ্ছে হলেই এমন
বাঁচা বাঁচতে পারো।
আহ্বান
কত কথা
বলাই হল
না
বলা বড়
দরকার ছিল
মুছে গেল
কত স্মৃতিলেখা
মিলে গেল
কিছু গোঁজামিলও।
আয় দিন
যায় দিন
করে
কেটে গেল
বেশিটা জীবন
কত কিছু
হতেও পারত,
ভাবলেই ভারী হয় মন।
মাঝ রাতে
কেঁদে উঠি
একা
কি করে
যে কান্না থামাই
মন খুলে
দেখাবার পরও
ভালবাসা বোঝেনি আমায়।
ভালবাসা পুড়িয়ে মেরেছে
ভেসে গেছে
মাঝ দরিয়ায়
জ্বলে পুড়ে
খাক হয়ে
শেষে
মন তবু
ভালবাসা চায়!
কিছু নেই
তবু বেঁচে আছি
আমি আছি,
আছে গৃহকোণ
এস তুমি
কিছু দুঃখ
দাও
ভালবেসে ডাকছি যখন।
আয় সুখ আয়
আয় সুখ আয় তোকে ছুঁয়ে বেঁচে
থাকি
যেভাবে রাতকে ছোঁয় রাতচরা
পাখি
যেভাবে মাটিকে ছোঁয় জোছনার
আলো
যেভাবে কালিকে ছোঁয় কাজলের
কালো
যেভাবে প্রেমিক ছেলে
প্রেমিকাকে রাতে
ছুঁয়ে থাকে সাবধানে, হাত
রাখে হাতে
যেভাবে পক্ষীমাতা ডিম রাখে
বুকে
সেভাবে আগলে তোকে বেঁচে
থাকি সুখে ।
যেভাবে পদ্ম পাতা মুছে ফেলে
জল
সেভাবেই তুই কেন চলে যাস বল
?
আয় সুখ আয় তোকে ছুঁয়ে বেঁচে
থাকি
নরম আদরে তোকে আয় ধরে রাখি
।
জল হয়ে যাওয়া
প্রেমে কেন সুখ নেই,
ভালবাসা কেন যে কাঁদায়
আসলে প্রেমিক না গো,
ভেবেছিল করবে আদায়!
তাই ভেঙে গেছে ডাল, ভেঙে
গেছে বুকের খাঁচাটি
যারা শুধু দিতে জানে, জানে
তারা প্রকৃত বাঁচাটি।
যে জন যেমন চায় ঠিক ঠিক তার
কথা শুনে
কত এল কত গেল, জল সেটা
দ্যাখে নাতো গুনে।
সাঁতরে যাবার পরে জলে পরে
থাকে কোনও রেখা?
জলই ভালবাসতে জানে আলিগলি
সবই তার শেখা।
চলো জল হয়ে যাই, বয়ে যাই
নদীটির পাশে
খিল খিল হেসে উঠি যদি কেউ
আসে, ভালবাসে।
ভালবেসে পাথর হোয়ও না, গলে জল হয়ে যাও ।
একটুকরো ভালবাসা হাতে
শুনশান গভীর রাতে মাথার উপর
সিংহ রাশি আর আকাশ গঙ্গা নিয়ে একলা দাঁড়িয়ে থাকি। ভূতুরে জোছনা মেখে দাঁড়িয়ে থাকে উঠোনের
নারকেল গাছটা, শিউলি ফুলগুলো আবছা
মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে দেয়। দূর থেকে ভেসে আসে আজানের সুর,মায়াবি ছায়া মাখা পৃথিবীর
মাটিতে একলা দাঁড়িয়ে শুধু তারা খসা দেখি।মহাকাশের নিচে একবুক অভিমান নিয়ে দাঁড়িয়ে
থাকতে থাকতে নিকষ কালো অন্ধকারে ডুবে আমার জমানো অভিমান বাষ্পের মত উড়তে থাকে, মেঘ থেকে চাঁদে, চাঁদ থেকে তারায়,তারা থেকে আকাশ-গঙ্গায়।উন্মাদ হয়ে আমি
শুধু জিজ্ঞাসা করি- ‘জীবনের মানে কি
ভগবান?’ আমার পার্থিব অস্তিত্ব মিশে যায় পরাবাস্তবতায়।অন্য তারার প্রান,অজানা পাখির গান,আচেনা সুরের তানে ভরে ওঠে
মন।সেই গানে, সেই তানে হারিয়ে যায়
আমার আমিত্ব।নিজেকে হারিয়ে শুধু একটুকরো ভালবাসা হাতে দাঁড়িয়ে থাকি তারাভরা আকাশের
নিচে।
সেই শিশুটি
যেই শিশুটি মাতৃ গর্ভে
তিল তিল
করে বড়
করেছ
সেই
শিশুটি
যেই শিশুটি তোমার
কোল আলো
করে খেলা
করবে
সেই
শিশুটি
যেই শিশুটি আমাদের
সারা বাড়ি মাথায়
করে রাখবে
সেই
শিশুটি
যেই শিশুটি তিল
তিল করে
বেড়ে বালক হবে, যুবক হবে
সেই
শিশুটি
যেই শিশুটি পরীক্ষা
পাশ করে
আসলে আমাদের বুক
দশ হাত
ফুলে উঠবে
সেই
শিশুটি
যেই শিশুটি আমাদের
ঘরে ঘর
আলো করা
বউ নিয়ে
আসবে
সেই
শিশুটি
যেই শিশুটি সারা
জীবন তোমাকে মা, আমাকে বাবা
বলে ডাকবে
সেই
শিশুটি
যেই শিশুটি মৃত্যুর
পর আমাদের মুখে
আগুন দেবে
সেই
শিশুটি
যেই শিশুটি আমাদের
অখণ্ডমণ্ডলাকার ব্রহ্মাণ্ড হয়ে
উঠবে
সেই
শিশুটি
আমাদের ঘরের বারান্দায়
আমাদের উঠোনের শিউলি
তলায়
পৌঁছানোর আগেই , হাসপাতালেই
দূর আকাশের ছোট্ট
একটি তারা হয়ে
গেল,
মণিমালা?
বেশ তো আছি,
ভালই আছি
এই তো সেদিন
মনের মধ্যে উঠল
জমে মেঘের
পাহাড়
তারপর ভাই মন
খারাপের সে কি
ভীষণ জমল ধুলো
অনেকটা রাত জাগার
পরও জাগতে
হত সমস্ত
দিন
এক নিমেষও ঘুম
ছিল না, শুধুই ছিল কান্নাকাটি।
অন্ধকূপে বন্দী হয়ে
সে কি
ভীষণ গুমরে মরা
দিনগুলো সব দিন
ছিল না
কাটছিল না একটা
দিনও
নদী পাহাড় সাগর
ঘুরে, ঘুরতে
ঘুরতে হন্যে হয়ে
ছিন্ন সুতো ঘুড়ির
মত উড়ছি
শুধু হাওয়ার টানে
আপন বলে কেউ
ছিল না
একলা আমি একলা
আমি
বন্ধ ঘরে আগুন
জ্বলে দাউ দাউ
দাউ তবুও
সেদিন
ঠাঁই দাঁড়িয়ে খুব
পুড়েছি। বৃষ্টি একটু
বৃষ্টি চেয়ে
যেই গিয়েছি বন্ধুরা
সব লেজ
গুটিয়ে দে ছুট
দিল ।
বনের মধ্যে তখন
আমি পথ
হারিয়ে কাঁদছি তো
খুব
এমন সময় একটা
ঋষি আমার
কানে মন্ত্র দিল।
সেই মন্ত্রটা পড়তে
পড়তে সেই মন্ত্রটা
জপতে জপতে
এখন আমি পূর্ণ
থেকে পূর্ণ তুলে
বেশ তো
আছি।
ঈশা বাস্যমিদং সর্বম্, মধু বাতা
ঋতায়তে
তৎ সবিতুর্বরেন্যম- বেশ তো
আছি, ভালই আছি।
মোম গলছে
সেদিন যখন আলতো
করে আমার
ডানায়
আদর মাখা অভিমানের
স্পর্শ দিলে
সেই দুপুরে জীবন
তখন শীতলপাটি
ফুরফুরিয়ে চলল উড়ে
আকাশ পথে।
ভারচুয়ালি ফেসবুকে না
ঠোঁটের পাশে
উষ্ণ তোমার স্পর্শ
পেয়ে পাগল পাগল
নাছোড়বান্দা তোমাকে আর
কিই বা
বলি
হ্যাঁ হ্যাঁ তুমি
সব লুটে
নাও সব
লুটে নাও।
ধকধকিয়ে উঠল জ্বলে
বহ্নি শিখা
মোম গলছে মোম
গলছে শরীর জুড়ে।
বাঁ চা র ম জা
আমি তো বেশ
ভালই আছি
তোমায় ছেড়ে দিব্যি
একা একা
অনেকটা রাত চাঁদের
সঙ্গে জাগি
সকালে পাই টুনটুনিটার
দ্যাখা।
ল্যাপটপ বা স্ক্রিন
টাচ মোবাইলে
ফেসবুকে রোজ নতুন
কিছু লাইক
দেশটাও বেশ গরগড়িয়ে
চলে
ইনফ্লেশান, দ্রব্য মূল্য হাইক-
সব কিছু বেশ
সয়ে গ্যাছে
আজ কাল
ভালবাসাও পদ্ম পাতার
জল
এক জীবনে ও
মেয়ে তুই এসে
কতটা আর দুঃখ
দিবি বল?
মন খারাপের মেঘেরা
ভেসে গ্যাছে
অনেক দূরে, দূর পাহাড়ের
গায়ে
নদীর তীরে একলা
হাঁটি আমি
ছলাৎ-ছলাৎ ঢেউ এর
রাশি পায়ে।
মরুভূমির উট হারিয়ে
গেলে
হেঁটেই চলে একলা
বেদুইন
মরীচিকার মিথ্যে জলের খোঁজে
ঘুরে বেড়ায় প্যারিস, জাপান, চীন।
আমিও যাই ছোট্ট নদীর তীরে
রোজই করি টুনটুনিটার খোঁজ
বাতাস মেখে তাধিন তাধিন বাঁচি
বাঁচার মজায় বেঁচেই থাকি রোজ।
বিন্দুতে দাঁড়িয়ে থাকা
দুটি সমান্তরাল সরলরেখা
অসীমে মিলিত হবে-
এই সত্য ধরে আমরা চলিনি।
বরং দুজন দুদিক থেকে এসে
হটাৎ মিলেছিলাম একটা বিন্দুতে।
তখন ব্যাসার্ধ-ব্যাস কিছুই ছিল না আমাদের।
সব দিক দিয়ে পারফেক্ট বিন্দু ছিল সেটা।
কিন্তু তারপর তুমি চলতে শুরু করলে
একদম অন্য দিকে।
আমি আজীবন চেষ্টা করেও পেরতে পারিনি
সেই বিন্দুর অন্ধকূপ,
আমি আজও সেই বিন্দুতে দাঁড়িয়ে আছি
শুধু তুমি ফিরবে বলে।
মুক্তি
আগুন? হ্যাঁ গো আগুনই বেশ ভাল
আগুনেই তো পোড়ায়, করে ছাই
দুঃসহ সেই স্মৃতির দহন থেকে
মুক্তি পেতে আগুন তোকেই চাই।
একলা ঘরে ডুকরে কাঁদার পরে
বাষ্প হয়ে ওড়ে অশ্রুকণা
ভুলে যাওয়া? সেটাই বরং ভাল
ভুলে যেতে জানে গো ক’জনা?
একলা আমি একাই হাঁটতে পারি
চাইনা আমি চাইনা কারও ছায়া
একটুখানি ভুলে থাকতে গেলেই
আগুন না গো, পোড়ায় আমায় মায়া।
চলো যাই বৃষ্টিদিনে
মেঘের ওপারে
দেখে আসি বিধাতার
নিজের বাগান
যেখানে জলের অণু
খুব চুপিসারে
লুকোচুরি খেলা করে
আর গায় গান।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন