পাতকী
এসেছে প্রেমিক যুবা প্রেম ভেঙে গেলে,
পাষণ্ড পুলিশ থেকে ডাকাতের দল-
সব্বাই এসেছে, আর ঢেলে গেছে বিষ।
ধোয়া তুলসী পাতা যে, সেও তো এসেছে!
এঁটো পাতে চেটেপুটে খেয়ে চলে গেছে।
এসেছে উকিল বাবু, এসেছে সন্ন্যাসী;
মুখ পাল্টাতে এসেছে গৃহস্ত মানুষ।
এসছে জুতো বিক্রেতা, জুতো কেনে যারা,
তারাও এসেছে সব গাঁ উজাড় করে।
কী নেবে গো দেহ থেকে? দেহে কীইবা আছে?
নর দেহে যত পাপ সব মুছে নিয়ে
রক্ত-মাংস-বিষ মেখে অন্তরে-অন্তরে
ধর্ষিত হয়েছি রাতে অযুত বছর।
সমস্ত শরীর দিয়ে বিষ শুষে নিয়ে
অপবিত্র তবু আমি কুলটা, পাতকী!
কেমন আছ?
কঠিন বাস্তবতাকে ভুলতে,
বেশি কথা না বাড়াতে,
তেতো সত্যকে এড়াতে,
নিজেকে লুকোতে
আমরা সকলেই যে প্রশ্নের মিথ্যা উত্তর দিই সেটা হল,
'কেমন আছ?'
বুকের গভীরে যন্ত্রণা লুকিয়ে ভাল থাকি।
জামার অস্তিনে রক্তের দাগ লুকিয়ে ভাল থাকি।
সব ইচ্ছেগুলোকে এক এক করে মরে যেতে দেখে ভাল থাকি।
'ভাল আছি' কথাটার উচ্চারণের মধ্যেই কোথায় যেন একটা যন্ত্রণার মোচড় লেগে থাকে।
মিথ্যের মুখোশ খুলে ওই ছোট্ট কথা দুটির মধ্যেই উঁকি মেরে যায় আমাদের দোমড়ানো মোচড়ানো খারাপ থাকা।
আমরা জানি কেউ ভাল নেই,
তবুও জিজ্ঞাসা করি-
'কেমন আছ?'
কিছু কথা
কিছু কথা না শোনাই ভাল
ভুলে যাওয়া ভাল কিছু কথা,
কিছু কথা শুধু ভেসে যায়
দাগ কাটে কিছু নিরবতা।
কিছু কথা যায় না তো ভোলা
কিছু কথা বেমালুম ভুলি,
কিছু কথা শুনে সুখ পাই
কিছু কথা বলে কান মুলি।
কিছু কথা, মানে নেই কোনও
কিছু কথা বড়ই ভাবায়,
কিছু কথা দেয় দূরে ঠেলে
কিছু কথা ডাকে, আয় আয়...
কিছু কথা, যেন পেঁজা তুলো
এদিক ওদিক যাক উড়ে,
কিছু কথা চড়ুক চিতায়
ছাই হয়ে যাক জ্বলে পুড়ে।
কিছু কথা, যাক থেমে যাক
কিছু কথা বল তুমি প্রিয়,
কিছু কথা ডাস্টবিনে রেখে
কিছু কথা বুকে তুলে নিও...
বৃষ্টি এলে
বৃষ্টি এলে বুকের ভিতর গোলাপ কুঁড়ি ফোটে
বৃষ্টি এলে মনটা বড় উদাস হয়ে ওঠে।
বৃষ্টি এলে শিউলিতলায়, ছাতিমগাছের ডালে
মনটা বড় কেমন করে বৃষ্টি-ঝরা কালে।
এখন তুমি অনেকদূরে না জানি কোনখানে,
ভিজছো কিংবা গুনগুনিয়ে সুর তুলেছো গানে।
তোমার গানের সেই সুরটাই বৃষ্টি হয়ে এসে
টাপুরটুপুর পড়ছে ঝরে মেঘকে ভালবেসে।
মেঘ বিরহী,কান্নাটা তার বৃষ্টি হয়ে ঝরে
তোমার বুঝি মেঘ দেখলেই আমায় মনে পড়ে?
আহ্বান
গুমরে মরেছি শুধু মনের গভীরে।
অস্ফুট আর্তিতে আর অপেক্ষায় -অপেক্ষায়
বয়ে গেছে রক্তধারা এই যমুনায়।
রুধিরের স্রোত-জল বৃথা, সব বৃথা।
অনেক মায়াবী রাত ঝলমলে দিন,
নিতান্ত নিস্ফল তারা, অপুষ্পক স্মৃতি।
এখনও গোলাপবাগে আধফোটা কুঁড়ি,
ভ্রমরের স্পর্শ পেতে প্রচণ্ড উন্মুখ।
প্রতীক্ষা,প্রতীক্ষা নিয়ে রাত ভোর জেগে
সরিয়ে রেখেছি পাশে বরমাল্য খানি।
তারার জন্মের পর তারার মৃত্যুতে,
চুপচাপ কাল স্রোতে বয়ে গেছে কাল।
নিঝুম দুপুর থেকে ধূসর বিকেলে
অলিন্দে একাকী বসে দেখেছি জগত।
লুকিয়ে রেখেছি কত চোরাবালি স্রোত।
লুকিয়ে রেখেছি কত পক্ষবিধূনন।
আগ্নেয়গিরির সেই উদ্গিরণের মত
আজ আমি অভিসারী, রোমাঞ্চ পিয়াসী।
তুমি এসো,
মুগ্ধতার সে প্রাচীন আধিকার নিয়ে এসো,
রুদ্ধদ্বারে বার বার কর করাঘাত।
তোমার উদ্ধত ফনায় আমাকে বিদ্ধ কর,
মুগ্ধ কর, কর শিহরিত, বাজিয়ে তোমার বীন
নিয়ে চল জ্যোৎস্নার মায়াবী জগতে।
তোমার ডানার স্বেদ বিন্দু
গড়িয়ে পড়ুক আমার ডানায়।
কানায় কানায় উপচে উঠুক রসস্রোত।
পিয়াসী তৃষ্ণার্ত বুকে ঢেলে দাও অমৃত তোমার ...
উল্টোপুরাণ
এইতো কদিন আগেও তোমরা
আগুন লাগালে বনেতে,
নৃশংস ভাবে পুড়লো পশুরা
দাগ কেটেছিল মনেতে?
বিষ ছড়িয়েছ আকাশে বাতাসে
বিষ ছড়িয়েছ জলেতে
বনকে পুড়িয়ে পাহাড় গুঁড়িয়ে
দুনিয়া ভরেছ কলেতে।
ময়না চড়ুই হারিয়ে গিয়েছে
তোমার লোভের জ্বালাতে
ডোডো পাখিদের মতই তারাও
পথ পায়নি তো পালাতে।
পশুপাখি ধরে খেয়াল খুশিতে
বাঁদর নাচন নাচাতে
বহু পাপ করে অবশেষে তুমি
বন্দি এখন খাঁচাতে।
পাখিরা উড়ছে মুক্ত আকাশে
মানুষ বন্দি খাঁচাতে,
কতদিন পরে জীবকূল খুশি
করোনা এসেছে বাঁচাতে।
বৃষ্টি
বৃষ্টি রে তুই দুষ্টু ভারি, তোর গলাতে সেই চেনা সুর!
ঘরের ছাদে গাছের পাতায়,বাজছে রে তোর পায়ের নূপুর!
বৃষ্টি কোথায় পেলি এ গান? বল না বৃষ্টি বল না আমায়,
একলা যখন কাঁদে এ মন, তোর গানে সেই কান্না থামায়।
বৃষ্টি রে তুই থাকিস কোথায়? আকাশপারে মেঘের দেশে?
কী আছে সেই অচিন দেশে, বল না বৃষ্টি মিষ্টি হেসে।
টিপ-টিপ-টিপ বৃষ্টি রে তুই, ঝর না এখন অঝোর-ধারায়,
রিম-ঝিম-ঝিম নূপুর বাজে, তোর সুরে এই মনটা হারায়।
বৃষ্টিরে আর কেউ না বুঝুক, তুই তো বুঝিস মনটা আমার,
তোর সুরে আজ উঠছে বেজে, বাউলমনে ধ্রুপদ-ধামার।
মনটা যে চায়, যাই চলে যাই, তোর সাথে আজ অনেক দূরে -
নদী-পাহাড়-বন পেরিয়ে, নতুন দেশে, অচিনপুরে।
সেই দেশে এক দুঃখী মেয়ে, আমার মতোই একলা ভারি,
সবাই তাকে ভুল বুঝেছে, তার সাথে ভাই দিস্ না আড়ি।
রিম-ঝিম-ঝিম গানটা গেয়ে, আমার কথা বলবি তাকে,
মনে আমার কষ্ট কত, বুঝিয়ে দিস্ গানের ফাঁকে।
বৃষ্টি আমি সে দেশ যাব, রিম-ঝিম-ঝিম গানেরসুরে
চল না বৃষ্টি চল না নিয়ে, সেই দেশে সেই অচিনপুরে...
আশ্চর্য
প্রতিটা মানুষ খুব ভালবাসা চায়
ভালবাসাকে বুকে জড়িয়ে, আগলে রেখে
ভালবাসার গভীর জলে অবগাহন করতে
চায় সকলেই।
সকলেই চায় ভালবাসাকে ধরে রাখতে
ভালবাসা মেখে পথ চলতে।
সকলেই বোঝে-
পৃথিবীতে আমরণ প্রেম আর ভালবাসা ছাড়া
আর কিছু নেই।
তবু মানুষ কেন ভালবাসতেই শিখল না ?
তবুও মানুষ কেন সবচেয়ে কম মূল্য দিল ভালবাসাকে ?
এই দুনিয়ার এটাই সবচেয়ে বড় আশ্চর্য...
একলা আমি
সেই নদীটার কাছে আমি যেই গিয়েছি
সে তো শুধু চুপটি করে শুনল কথা
সেই পাহাড়ের কাছে আমি যেই গিয়েছি
তার তো তখন বুকের ভিতর নিরবতা ।
এই আমিতো এরও আগে কয়েকশ' বার
এদের কাছে এসেছিলাম তোমায় নিয়ে
তখন তাদের সবার কত প্রগলভতা
খিলখিলিয়ে হাসত শুধু সমস্ত দিন।
এখন তুমি যেই গিয়েছ আমায় ছেড়ে
এদের সবার গোমড়া মুখে কুলুপ আঁটা।
তোমায় ডেকে দিলাম চিঠি হাওয়ার গায়ে
তোমায় ডেকে দিলাম চিঠি ঘুড়ির বুকে পাখির ডানায়...
সেই পাখিটা উধাও হল,স্তব্ধ হল বাউল বাতাস
সেই ঘুড়িটা গোঁত্তা খেয়ে পড়ল খসে মাঠের পাশে
ক্যালেন্ডারের দিনগুলো সব থমকে আছে মুখ বেঁকিয়ে
আকাশ জুড়ে অন্ধকারে একলা আমি... একলা আমি…
প্রতিটি কবিতা অসাধারণ। আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। আমি এই রকম আরও কবিতা পাঠ করার অপেক্ষায় রইলাম।
উত্তরমুছুন